ফেসবুক বাংলাদেশে আসার পর থেকেই অনেক জনপ্রিয়, শুধু বাংলাদেশে না সারা পৃথিবীতে ই ফেসবুক অনেক জনপ্রিয়, কিন্তু কথা অন্য যায়গায়, ফেসবুক সারা পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে জনপ্রিয়, বিজনেস করার জন্যও জনপ্রিয় কিন্তু বিজনেস করার জন্য আমরা ফেসবুকের উপর যেভাবে নির্ভরশিল সেভাবে কি ফেসবুক অন্যরাও এতো বেশি নির্ভরশিল। দ্বিমত থাকতে পারে তবে আমি মনে আমরা অনেক বেশি মাত্রায় ফেসবুকের উপর নির্ভরশিল।
কেন আমরা এতো বেশি ফেসবুক মার্কেটিং এ নির্ভরশীল।
১। ফেসবুকে প্রচুর মানুষ, তাই এটাই সব থেকে ভালো প্লাটফর্ম
২। গুগল অ্যাড, এস ই ও ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা খুব ভালো জানি না, বিশেষ করে লোকাল ভাবে যারা বিজনেস করছে অথবা যারা জানি তারা অনেকেই রিস্ক নিতে চাই না, কারন অন্যরা তো ফেসবুকেই করছে আমিও তাই করবো।
৩। ফেসবুকেই মার্কেটিং একমাত্র পথ হিসেবে মনে করা, অনেকটা সাব কন্সাস মাইন্ডে ঢুকে গেছে যে ফেসবুকেই মার্কেটিং করা লাগবে।
ফেসবুক ছাড়া অন্য কিভাবে প্রোডাক্ট অথবা বিজনেস মার্কেটিং করা যায়
আমি এখানে ফেসবুক বয়কট করেন, বাদ দেন ইত্যাদি এগুলা লিখতে আসি নাই, শুধু এটাই জানাতে চাই যে শুধু মাত্র ফেসবুক নির্ভর মার্কেটিং আমাদের জন্য শুভ ফলাফল বয়ে আনছে না সব সময়। তাহলে ফেসবুকের সাথে সাথে অন্য মিডিয়াগুলাতে আমরা যদি শুরু করি হয়তো রাতারাতি হবে না তবে একদিন হবেই এটা বলাই যায়।
অন্য কোন প্ল্যাটফর্মে কাজ করা যেতে পারে
১। ওয়েবসাইট বানিয়ে সেটার এস ই ও করা, আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে গুগল থেকে সেল আসে না ইত্যাদি ইত্যাদি কথাটা সঠিক না, সঠিক ভাবে করতে পারলে গুগল হতে পারে চমৎকার একটা মার্কেটিং প্লেস, অনেকেই করছে, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনি যখন ভিজিট করেন নিজেই দেখতে পাবেন সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন, অথবা আপনি যখন ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় অ্যাড দেখেন সেটাও।
গুগলে সার্চ করে যারা প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস খুঁজে তাদের কিন্তু একটা লক্ষ্য থাকে, ফেসবুকে আমরা স্ক্রল করে বেড়াই এবং যদি চোখের সামনে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস আসে আমরা সেটা গ্রহন করি, কিন্তু গুগলে যারা সার্চ দেয় তারা কিন্তু একটা প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস কিনবে এটা আগে থেকে চিন্তা করেই সার্চ দেয় এবং সেটা যদি হয় তাহলে এখানে কনভার্সন রেট কিন্তু ভালো থাকে।
আর বিভিন্ন ওয়েব সাইটে আমরা যে অ্যাড দেখি, আমরা গুগলে অ্যাড দেয়ার সময় নির্বাচন করতে পারি যে কোন কোণ ধরনের ওয়েবসাইটে আমার অ্যাড গুগল শো করবে।
২। ফেসবুক ছাড়াও অন্য সোশ্যাল সাইটে মার্কেটিং করা
পিন্টারেস্ট, টুইটার, লিঙ্কডিন, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি আরো বহু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আছে, তাদের পেইড অ্যাড সার্ভিসও আছে, তাহলে সেগুলা নিচ্ছি না কেন আমরা?
একটাই কারন এগুলা আমাদের দেশে ফেসবুকের মত জনপ্রিয় না, ভিজিটর কম? কিন্তু আপনি জানেন কি পাশের দেশ ভারতে এখন পিন্টারেস্ট প্রোডাক্ট মার্কেটিং এ অনেক বেশি জনপ্রিয়? আসলেই তাই।
এটা আসলে প্র্যাকটিসের ব্যাপার, একদিন দুইদিন, অথবা একমাস দুইমাসে হবে না, সময় লাগবে তবে আমাদের অন্য যে সোশ্যাল সাইটগুলা আছে সেগুলাতে সময় দেয়া লাগবে, নিয়মিত আসা লাগবে, পোস্ট করতে হবে, কমিউনিটি বিল্ডাপ করতে হবে, অন্যদেরকে ইনভাইট করতে হবে। ঠিক যেভাবে আমরা ফেসবুক কে জনপ্রিয় করেছি সেরকম ভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। আপনি শুরু করেন, আরো ১০ জনকে বলেন, তারা আরো ১০০ জনকে বলবে, এভাবে শুরু হবে।
আমি বলছি না টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, লিঙ্কডিন ইত্যাদি সব কিছুতে একসাথে কাজ করেন, যে কোন একটা মিডিয়া নির্বাচন করেন, বিশ্বাস করেন, মার্কেটিং কোথায় করছেন সেটা জরুরি না, সেটা ফেসবুকে না হলে কোন কিছুই ম্যাটার করে না, ম্যাটার করে মার্কেটিং যেখানে করছেন সেখানে ভিজিটর আছে কিনা, ভিজিটররা সেখানে নিয়মিত কিনা। যখন ভিজিটর থাকবে, তারা নিয়মিত ভাবে সময় কাটাবে তখন ব্যবসায়ীরা অটোমেটিক্যালি সেখানে অ্যাড দিবে।
উদ্যোক্তাদের কথা চিন্তা করে, ফেসবুক মার্কেটিং এর উপর বিভিন্ন গাইডলাইন, সাজেশন, টিপসমূলক আমার লেখা একটা বই আছে বাজারে, যারা নিতে আগ্রহী আমাকে ইনবক্স করতে পারেন।
নিজেদের একটা প্ল্যাটফরম এর কথা চিন্তা করা
না, আমি সোশ্যাল মিডিয়ার কথা বলছি না, তবে আমরা এখানে একটা প্লাটফর্ম করতে পারি যেখানে মানুষ বিজ্ঞাপন দিবে, হ্যা বিক্রয় ডট করছে তাহলে সেখানে আমরা নিয়মিত হতে পারি বায়ার এবং সেলার অথবা নতু ফরম্যাটে, নতুন আইডিয়াতে নতুন কিছু তৈরি হতে পারে, যেখানে ভিজিটর আসবে, এসে বিভিন্ন প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসের অ্যাড দেখবে এরপর সেখান থেকে কেনা বেচা হবে। যতটা সহজ ভাবে লিখলাম একদমই সহজ না কাজটা করা তবে আমি মনে করি অসম্ভবও না, আর নিজেদের প্লাটফর্ম থাকলে কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে যেমনঃ
১। অলগারিদম আমরা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করে বানাতে পারবো
২। টার্গেটিং এ অনেক ধরনের অপশন থাকবে যেটা আমরা ফেসবুকে পাই না, যেমন যাদের গাড়ি আছে, যাদের বাড়ি আছে, যাদের বাইক আছে, প্রতিটা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ডাটাবেজ থাকতে পারে এখানে, প্রতটা কোম্পানির ইমপ্লোয়ারের ও। তাহলে অ্যাড দিতেও সুবিধা হবে, কেউ হয়তো চায় গাড়ি সম্পর্কিত কোন সার্ভিস দিতে তাহলে সে খুব সহজেই যাদের গাড়ি আছে তাদের নির্বাচন করতে পারবে, কেউ চায় প্রাইভেট ভার্সিটির স্টুডেন্টদের টার্গেট করতে সে খুব সহজেই পারবে, ফেসবুকে আছে ভার্সিটির স্টুডেন্ট, ইমপ্লোয়ার কিন্তু সেটা কতটুকু আছে এবং কত ভালো ভাবে আছে এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই, এ ছাড়া আরো অনেক কিছু টার্গেট এ নিয়ে আসা যাবে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ডেমোগ্রফিক তৈরি করার মাধ্যমে।
আজকে এতোটুকুই, এটা লেখার উদেশ্য একটাই ছিলো যে ফেসবুক থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে হবে, অন্য উপায় সামনে আছে সেগুলাতে কমিউনিটি বিল্ডাপ করতে হবে না হলে যখন ফেসবুকে প্রবলেম হয় তখন একজন ব্যবসায়ীকে কিরকম বিপদে পড়তে হয় সেটা বুঝার এখনই মনে হয় সেরা সময়।