ফ্রীলান্সিং এর কাজ করার জন্য ফাইভার বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস। বায়ার ও সেলার উভয়ের কাছে জনপ্রিয়। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের চেয়ে তুলনামূলক সহজ ও চাহিদা বেশি থাকায় নতুন অনেকে কাজ শিখার পর ফাইভারের মাধ্যমে টাকা আয় করতে আগ্রহী হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে কেউ অনেক কাজ পাচ্ছে আবার কেউ কাজই পাচ্ছে না। তাহলে সমস্যা কোন জায়গায়? প্রধান যে সমস্যা দেখা যায় নতুনরা অ্যাকাউন্ট খোলার পরই কোনমতে একটা গিগ তৈরি করে আর বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গিগ শেয়ার করতে থাকে!
গিগ শেয়ার দোষের কিছু না। ফাইভার নিজেই বলে আপনার গিগ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য (যদিও লাভ বেশি হয় ফাইভারের । ব্যাপারটা পরে বুঝিয়ে বলছি। ) । ধরুন, আপনার একটা কাপরের দোকান আছে। দোকানের অর্ধেকের বেশি জায়াগা খালি আর সাজসজ্জা তেমন ভালো নয়। আপনি এইদিকে খেয়াল না দিয়ে আপনার দোকানের প্রচারণা শুরু করে দিলেন! কিছু গ্রাহক আসবে ঠিকই। এসে দেখবে আপনার দোকান প্রায় খালি। কিছু নাই। অই গ্রাহকদের জায়গায় আপনি নিজেকে কল্পনা করুন। আপনি কি দোকানে থাকবেন না বের হয়ে যাবেন? সিদ্ধান্ত আপনার হাতেই ছেড়ে দিলাম
এখন চিন্তা করুন আপনি ফাইভার গিগ তৈরি করলেন কিন্তু তেমন কিছু লিখলেন না। আপনি কি কাজ পারেন বা কাজের স্যাম্পল বা বায়ার কেনও আপনাকে বেঁছে নিবে কিছুই লেখা নেই। তাহলে বায়ার আপনাকে কেনও অর্ডার দিবে? আপনি যে সার্ভিস দিবেন, এর মত এর হাজার হাজার গিগ আছে। বায়ারেরতো আরও বিকল্প আছে। যখন আপনি দোকানে দেখবেন কাপর নেই। তখন নিশ্চয়ই পাশের দোকানে চলে যাবেন না? এটা নিশ্চয়ই হওয়ার কথা!
আপনি যতই মার্কেটিং করুন বা গিগ শেয়ার করুন। কোনকিছু লাভ হবে না, যতক্ষণ না আপনি আপনার গিগ প্রফেশনাল ভাবে সাজাবেন। তাহলে কি প্রফেশনাল কাউকে হায়ার করতে হবে? না ভাই, আপনি নিজেই পারবেন। শুদু আপনাকে সময় নিয়ে গবেষণা করতে হবে। আপনি ধাপে ধাপে দেখানো চেষ্টা করবো কিভাবে আপনি প্রফেশনাল মানের গিগ সাজাতে পারেন।
এই পোস্টে এক্সাম্পল হিসেবে ‘ওয়ার্ডপ্রেস ল্যান্ডিং পেজ’ এর গিগ কিভাবে তৈরি করা যায় তাই দেখাবো। মোটামটি সব গিগের একই রকম অপশন থাকে। একটা গিগ তৈরি করা দেখলে আশা করি বাকী গিগ কিভাবে তৈরি করতে পারেন তা বুঝতে পারবেন।
তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। বায়ার কি লিখে সার্চ দিবে তাই নিয়ে চিন্তা করুন। বায়ারের জায়গায় আপনাকে চিন্তা করুন। ‘ল্যান্ডিং পেজ’ লিখে সার্চ দেওয়ার সুযোগ বেশি। আপনিও লিখে সার্চ দিন। নিশ্চয়ই অনেক গুলা গিগ আপনার সামনে। দেখুন এই নামে সার্চ দিলে কয়েক হাজার গিগ আছে। কিন্তু আপনার সামনে কয়টা আছে? ৪৮ টা! এগুলা কেনও আলাদা? নিশ্চয়ই কোন কারন আছে? আমরা এই কারন বের করার চেষ্টা করি। খেয়াল করবেন যাদের গিগ প্রথম পেজ এ আছে, তাদের কাজ পাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। এর মধ্যে যাদের রিভিউ ৭০-৮০ টি এর উপরে আছে তার মধ্য থেকে ৮-১০ টা গিগ নতুন ট্যাবে ওপেন করে রাখুন। এখন খেলা শুরু
গিগ টাইটেল: গিগ তৈরি করার সময় প্রথমে দিতে হয় গিগ টাইটেল। সর্বোচ্চ ৮০ অক্ষর ব্যাবহার করতে পারবেন টাইটেলে। যে গিগ গুলো আপনি নতুন ট্যাবে ওপেন করেছেন। সেগুলার প্রতিটা টাইটেল আপনি কোন একটা এডিটর বা ওয়ার্ড ফাইলে রাখুন। তারপর দেখুন কোন ওয়ার্ডগুলা কমন এবং অনেকেই ব্যাবহার করেছে। ওয়ার্ডগুলা আলাদ করে রাখুন। এর ফলে আপনি অনেক গুলা ওয়ার্ড পেয়ে গেলেন। এখন আপনি এই ওয়ার্ডগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিজের মত একটি টাইটেল তৈরি করুন। ভুলেও কপি করবেন না।
ক্যাটাগরি, সার্ভিস টাইপ আর মেটাডাটা: এগুলা আপনি অই গিগ দেখে আইডিয়া নিতে পারেন এবং পাশাপাশি নিজে যা দিতে পারবেন সেগুলা সিলেক্ট করবেন।
সার্চ ট্যাগস: এইতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বায়ার কি লিখে সার্চ দিতে পারে, সেগুলা লিখবেন। টাইটেলের মতই সব গিগ থেকে ট্যাগস নিয়ে আলাদা করে রাখবেন। তারপর যেগুলা জনপ্রিয় ও বেশি ব্যাবহার করা হয়েছে সেগুলা যোগ করবেন।
প্রাইস প্যাকেজ: এখানে সাধারণত একটি বা ৩ টি প্যাকেজ রাখা যায়। সবচেয়ে ভালো হয় ৩ টি প্যাকেজ ব্যাবহার করলে। অন্যান্য গিগ দেখে ধারনা নিতে পারেন। আপনি নতুন হলে নরমাল প্রাইসের চেয়ে সামান্য কম রাখতে পারেন। তবে খুব কম রাখবেন না। এতে মার্কেট নষ্ট হয়। আর যাদের কাজ দেওয়ার ইচ্ছা তারা প্রাইসের চেয়ে কোয়ালিটির দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকে। প্রাইস করার সময় এক প্যাকেজের সাথে অন্য প্যাকেজের যাতে একটা ব্যবধান থাকে। ধরুন, একটি শার্ট কিনলে ৫০ টাকা, ২ টা কিনলে ৮০ টাকা আর ৩ টা কিনলে ১০০ টাকা। যাতে বড় প্যাকেজ অর্ডার করতে বায়ার আগ্রহী হয়।
এক্সট্রা সার্ভিস: এখানে নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি এক্সট্রা কিছু যোগ করতে পারেন। যেমন ১২ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি বা অন্য কোন সুবিদা। এগুলা আপনার গিগকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
ডেসক্রিপশন: গিগের অন্যতম প্রধান জায়গা এটি। এখানে ১২০০ অক্ষরের মধ্যে আপনার গিগের বর্ণনা দিতে পারবেন। কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমে হাই/হ্যালো বলে শুরু করতে পারেন। ২/১ লাইনে আপনার কিছু বর্ণনা দিতে পারেন। বেশি লিখার দরকার নাই। নিজের সম্পর্কে বেশি লিখলে জিনিসটা বিরক্তিকর হয়ে যায়। তার চেয়ে আপনি ফুকাস করবেন, বায়ারের কি লাভ হবে এই গিগ অর্ডার করলে। আপনি তাকে কি কি সুবিদা দিবেন, কি লাভ ইত্যাদি লিস্ট আকারে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি নিজের পোর্টফলিও থাকলে এখানে লিঙ্ক শেয়ার করে দিতে পারেন। ডেসক্রিপশন এর লেখা গুলা সাজিয়ে লিখতে হবে, আকর্ষণীয় ভাবে। এবং বায়ারের যতরকম কমন প্রশ্ন আছে সব আপনার ডেসক্রিপশন এ রাখ্রা চেষ্টা করবেন। যে গিগ গুলা ওপেন করে রেখেছেন অইখান থেকে ধারনা নিতে পারেন। যাই করেন, ভুলেও কপি করবেন না।
ফ্রিকুএন্টলি আস্কড কুএসচন (FAQ): এখানে আপনি কিছু কমন প্রশ্ন আর উত্তর রাখতে পারেন। যেমন যারা ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে কাজ করেন তাদের লগিন ইনফো দরকার হয়। যারা লোগো নিয়ে কাজ করেন তার কোন কোন ফরম্যাটে কাজ করেন ইত্যাদি। চেষ্টা করবেন যাতে বায়ার এখান থেকে কমন প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়।
গিগ গ্যালারী: এখানে আপনি ৩ ধরনের ফাইল দিতে পারেন। আমরা একটা একটা করে বোঝার চেষ্টা করি
গিগ ফটোস: এখানে আপনি গিগ রিলেটেড ফতো দিতে পারেন। আপনি জেপিজি/পিএনজি ফরম্যাটে ফতো দিতে পারেন। সাইজ হবে ৫৫০X৩৭০ পিক্সেল। এখানে সর্বোচ্চ ৩টি ফটো রাখতে পারবেন। চেষ্টা করবেন ফটো গুলা নিজে বানানোর জন্য আর যত আকর্ষণীয় করা যায়। ফটোশপ না জানলে অনলাইনে অনেক সাইট আছে যেখান থেকে ফটো বানিয়ে নিতে পারেন।
গিগ ভিডিও: চাইলে আপনি ভিডিও বানিয়ে দিতে পারেন। নিজে সেলফ ভিডিও করলেন। আপনার বর্ণনা, কাজের বর্ণনা ইত্যাদি সুন্দর করে বানিয়ে দিতে পারেন। ভিডিও সর্বোচ্চ ৭৫ সেকেন্ডস আর ৫০ এমবি এর বেশি যাতে না হয়।
গিগ পিডিএফ: আপনি আপনার কাজের বর্ণনা, কাজের স্যাম্পল, এর অনেক কিছু পিডিএফ বানিয়ে রাখতে পারেন।
বলা যায়, এই হচ্ছে একটি ভালো প্রফেশনাল মানের গিগ তৈরি করার উপায়। প্রতিটা ধাপ সময় নিয়ে তৈরি করুন। তাড়াহুড়া করবেন না। ভালো একটা গিগ আপনাকে অনেক কাজ পেতে সাহায্য করবে। আপনার মার্কেটিং করার তেমন প্রয়োজনই পরবে না। এই পোস্টে সামনে আরও অনেক কিছু যোগ করা হবে।
ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না