আজকে যখন আমাদের ইনস্টিটিউটে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক সাপোর্ট দিচ্ছিলাম তখন আমাদের এক ছাত্র আমাকে বলে “স্যার আমার আইডি ব্যান হয়ে গেছে কারণ হিসেবে ফাইবার দেখিয়েছে একাধিক আইডি চালানো !স্যার আমিতো একটি আইডি চালাই তাহলে আমার আইডি ব্যান করবো কেন?”
আমি তার উত্তর দেই সেখানেই তা ছাড়াও আরো ইনফর্মেশন আমি খুঁজে বের করেছি আপনাদের জন্য আশা করি ইনফরমেশন গুলো দেখলে অনেক উপকৃত হবেন।
ফাইভারে অ্যাকাউন্ট ব্যান হওয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, আইপি সমস্যা।
আসলে আইপি সমস্যা দেখিয়ে ফাইবার কখনো একাউন্ট ব্লক করে না। তারা মাল্টিপল একাউন্ট ব্যবহারের অপরাধে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে থাকে। বিষয়টির সাথে শুধু আইপি নয়, বরং ডিভাইসের ব্যাপারটিও জড়িত। বিভিন্ন সময়ে অনেককে দেখা যায় তার একাউন্ট ব্লক হয়েছে মাল্টিপল একাউন্ট থাকার কারণে, কিন্তু সে দাবি করছে তার একাধিক অ্যাকাউন্ট নেই। এখানে আমরা ফাইভারকে মিথ্যাবাদী ভাববো, নাকি যার একাউন্ট ব্লক হয়েছে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলবো?
আসলে কেউই মিথ্যাবাদী নয়, বোঝার ভুল রয়েছে এখানে।
ফাইভার আইপি সংক্রান্ত আলোচনা (A-Z):
ভুলটা মূলত আমাদেরই, তবে কিছু কিছু সময় ফাইভারের ভুল থাকতে পারে। যেহেতু এটা তাদের সিস্টেম থেকে অটোমেটিক ধরা হয়, বিভিন্ন কারনে সিস্টেমের অ্যালগরিদম কাজ করতে গিয়ে ভুল টার্মে পড়ে একাউন্টের সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে এটা খুবই রেয়ার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের ভুল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আইপি সংক্রান্ত বিষয়ঃ আপনি যদি আইপি নিয়ে খুব বেশি টেনশনে থাকেন, তবে চাইলে আপনি যদি সুযোগ থাকে ডেডিকেটেড আইপি নিয়ে নেবেন।
কিন্তু যদি আপনি শেয়ারড আইপি ব্যবহার করেন তার মানে এই নয় যে, আপনার ফাইভার একাউন্ট ব্লক হবে। শেয়ার্ড আইপি এর মাধ্যমে আপনি যদি ফাইবার ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে ফাইবার সাধারণত আপনার আইপি এর পাশাপাশি লোকেশন এবং ডিভাইস ম্যাক আইডি ট্রাক করে থাকে এবং এক্ষেত্রে ডিভাইসের ম্যাক আইডি এর প্রতি প্রাধান্য বেশি দেওয়া হয়। এর মানে দাঁড়াচ্ছে আইপি নিয়ে আপনাকে খুব বেশি টেনশন না করলেও চলবে। মূলত, আপনি যদি একই কম্পিউটার কিংবা একই মোবাইলে একাধিক আইডি ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনার ভয়ের তেমন কিছু নেই।
তবে কেউ যদি একই ওয়াইফাই রাউটার এর আন্ডারে দুটি আলাদা পিসিতে দুটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনাদের ফাইভারের সার্ভিস যেন আলাদা হয়। অন্যথায় আপনাদের দুটি অ্যাকাউন্টই ব্লক হতে পারে। আপনার বন্ধু এবং আপনি দুজনেই একই সার্ভিস দিয়ে থাকেন এবং দুজনেই ফাইভের একাউন্ট এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে।
আপনারা বিভিন্ন সময়ে Shareit এ্যাপ এর মাধ্যমে ফাইল আদান প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন ফাইল আদান প্রদানের পূর্বে আপনার এবং আপনার বন্ধুর দুজনেরই মোবাইল ডাটা অফ আছে কিনা। যদি না থাকে অবশ্যই অফ করে নিবেন।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং উত্তরঃ
প্রশ্ন-০১ঃ আমার ইন্টারনেট এর আইপি কিভাবে চেক করবো?
উত্তরঃ গুগলে গিয়ে “What is my IP” লিখে সার্চ দিন। তাহলে যে আইপিটা দেখতে পাবেন, সেটাই আপনার ইন্টারনেটের আইপি। https://canyouseeme.org সহ আরো কিছু সাইট রয়েছে যেগুলো দিয়ে চেক করা যায়, কিন্তু আমি যেভাবে বলেছি এটার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারবেন খুব সহজে।
প্রশ্ন-০২ঃ ডেডিকেটেড আইপি নেওয়া কি বাধ্যতামূলক?
উত্তরঃ না, ডেডিকেটেড আইপি নেওয়া মোটেও বাধ্যতামূলক নয়। তবে সুযোগ থাকলে সম্পূর্ণরূপে সেফ থাকার জন্য, আপনি চাইলে ডেডিকেটেড আইপি নিতে পারেন।
প্রশ্ন-০৩ঃ আমার ISP বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আমাকে ডেডিকেটেড আইপি দিয়েছে কিনা বুঝবো কিভাবে?
উত্তরঃ আপনি যদি ডেডিকেটেড আইপি নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে যে আইপিটা দেওয়া হবে সেই আইপি দিয়েই আপনার রাউটার কনফিগার করা হবে এবং ওই একই আইপি গুগলে “What is my IP” লিখে সার্চ দিলে শো করবে। যদি আপনার রাউটারের ভেতরে দেওয়া আইপি এবং গুগলে পাওয়া আইপি না মিলে যায়, তবে বুঝতে হবে এটা ডেডিকেটেড আইপি না।
প্রশ্ন-০৪ঃ আমি কি একই সাথে মোবাইল এবং কম্পিউটার এ আমার ফাইবার আইডি ব্যবহার করতে পারবো?
উত্তরঃ অবশ্যই পারবেন শুধু একটি কম্পিউটার কিংবা একটি মোবাইল না আপনার যদি একাধিক কম্পিউটার কিংবা একাধিক মোবাইল থাকে সেগুলোতেও চাইলে আপনার ফাইবার একাউন্ট টি ব্যবহার করতে পারবেন এবং একই সাথে ব্যবহার করতে পারবেন তবে খেয়াল রাখতে হবে ওই সব মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে অন্য কোন ফাইবার অ্যাকাউন্ট কখনো যেন ব্যবহার করা না হয়।
প্রশ্ন-০৫ঃ আমি আমার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লাইন পরিবর্তন করবো এতে কোন সমস্যা হবে কি?
উত্তরঃ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লাইন পরিবর্তন করলে এক্ষেত্রে আপনার আইপিও পরিবর্তন হচ্ছে, সেটা হোক ডেডিকেটেড কিংবা শেয়ার আইপি। এক্ষেত্রে আপনি নিজের সেফটির জন্য ফাইবার সাপোর্টে একটি মেসেজ দিয়ে রাখতে পারেন যে, আপনি আপনার ইন্টারনেট লাইন পরিবর্তন করছেন। যদিও এটা জরুরী নয়, কিন্তু এটা করলে আপনি সেইফ থাকবেন।
আমি নিজে ফাইবারকে এমনটা জানিয়েছিলাম লাইন পরিবর্তনের আগে এবং তারা বলেছে তাদের সিস্টেম হয়তো অ্যালগরিদম এর উপরে নির্ভর করে একাউন্ট ডিজেবল করলে করতেও পারে। কিন্তু যেহেতু আমি তাদেরকে জানিয়েছি, তাই যদি আমার একাউন্ট ডিজেবল হয়, তাদের সাথে পূনরায় যোগাযোগ করতে বলেছে এবং তারা অ্যাকাউন্ট ঠিক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, তাদেরকে জানালে আপনি সেফ থাকবেন।
প্রশ্ন-০৬ঃ আমি কম্পিউটারে ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করি এবং বাসায় থাকলে মোবাইলেও ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করি। কিন্তু বাইরে গেলে মোবাইল ডাটা ব্যবহার করি এতে কি কোনো সমস্যা হবে?
উত্তরঃ না, এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন-০৭ঃ কোন মার্কেট কিংবা পাবলিক প্লেসে গিয়ে যদি যদি ওপেন ওয়াইফাই ব্যবহার করি এবং সেই একই ওয়াইফাইতে অন্য কোন ফাইবার ব্যবহারকারী থেকে থাকে, তাহলে কি কোন সমস্যা হবে?
উত্তরঃ ফাইবার অত্যন্ত স্মার্ট, তারা একটি ইন্টারনেট আইপি থেকে আপনি কতবার লগইন করলেন কিংবা আপনি সবসময় যে লোকেশন থেকে ব্যবহার করেন সেটাই আপনার পার্মানেন্ট নাকি পাবলিক ওয়াইফাই পারমানেন্ট এসব বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে পাবলিক ওপেন ওয়াইফাই ব্যবহার করলেও আপনার কোন সমস্যা হবে না। এমনকি ওই ওয়াইফাইতে অন্য কোন ফাইভার ব্যবহারকারী থাকলে তাতেও আপনার কোন সমস্যা হবে না। তবে যদি প্রতিনিয়ত আপনি এটা করেন তাহলে ঝামেলা হতে পারে।
আর অবশ্যই সাজেশন থাকবে নিরাপত্তার স্বার্থে এসব ওয়াইয়াইতে লগিন না করা।
প্রশ্ন-০৮ঃ আমি মোবাইল ডাটা কিংবা মডেম দিয়ে ফাইভার ব্যবহার করি। কোনো সমস্যা আছে?
উত্তরঃ যারা মোবাইলের ডাটা কিংবা মডেম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। প্রতিবার ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ এবং অন হওয়ার সাথে সাথে আপনাদের আইপি রেনডমলি পরিবর্তন হয়। অনেকে এই আইপি পরিবর্তনের বিষয়টিও ভয়ের কারণ মনে করেন। কিন্তু কোন ভয় নেই, আপনারা নির্ভয়ে যে কোন সিমের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
শুধু খেয়াল রাখবেন, একাধিক ফাইবার একাউন্ট ব্যবহার না করলেই হবে।
প্রশ্নঃ-০৯ঃ পাবলিক ওয়াইফাই কিংবা বন্ধুর ওয়াইফাই দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা দরকার হলে ফাইভারের বিষয়টি সেফ রাখবো কিভাবে?
উত্তরঃ যদি সময় বিশেষে এমনটা দরকার পড়ে তাহলে এসব ওয়াইফাই এর সাথে কানেক্ট হওয়ার আগে, ফাইভার এ্যাপ থেকে লগ-আউট করে নিন। এ্যাপ এর মেনু থেকে সেটিংসে গেলে লগ-আউট পাবেন।
সর্বশেষে বলবো সতর্ক থাকার জন্য জানার চেষ্টা করুন, কিন্তু ফাইভারের সাথে কোনোরকম চালাকি করার চেষ্টা করবেন না। চালাকি করলে ধরা খাবেন, এমনকি কিছুদিন কিংবা কয়েক মাস ধরা খাননি, তাতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। ধরা একদিন পড়বেনই এবং রেজাল্ট সরাসরি ব্যান।
যদি ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসাবে নিতে চান, তাহলে সৎভাবে নিয়ম মেনে কাজ করুন। আশা করি কোনো ঝামেলায় পড়বেন না।
বিঃদ্রঃ অনেকেই আছেন হয়তো এসব নিয়মের বাইরে থেকেও এখনও অনেকদিন যাবৎ টিকে আছেন। তারা কমেন্ট করে কাউকে কনফিউসড করবেন না। আপনাদের ভাগ্য এখনও অবধি ভালো কিন্তু আজ হোক কিংবা কাল আপনি ঝামেলায় পড়বেনই। তাই অন্যকে বিপদে ফেলবেন না।